রোহিঙ্গা পাসপোর্ট তৈরিতে জড়িত নোয়াখালী সিন্ডিকেট

পূর্বকোণ •

রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরিতে জড়িত পুলিশ-জনপ্রতিনিধি ও পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা। দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করছে। নোয়াখালী পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা, নোয়াখালী জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার উচ্চমান সহকারী ও দুই পুলিশ সদস্য, ১৯ দালাল ও দুই ইউপি সদস্য রোহিঙ্গা পাসপোর্ট তৈরির সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি রোহিঙ্গা পাসপোর্ট তৈরিতে সর্বনিম্ন ৫ হাজার ৫০০ (সাধারণ) ও ৯ হাজার ৫০০ (জরুরি) টাকা খরচ পড়ে। এছাড়া প্রতি পাসপোর্টে ১০৫০ টাকা (পাসপোর্ট অফিস) ও পুলিশের বিশেষ শাখায় ৬০০ টাকা নিয়ে থাকে।

নোয়াখালী জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার উচ্চমান সহকারী মনিরুল ইসলাম, সেনবাগের ৪ নং কাদারা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু বক্কর ছিদ্দিক ও ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল হাকিম রোহিঙ্গা পাসপোর্ট তৈরির সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর আকবরশাহ থানার মীর সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে সন্দেহজনকভাবে পাঁচ যুবককে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে চার যুবক রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বসবাস করেন। তিনজনের কাছে নোয়াখালীর ঠিকানায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়া যায়। এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়ার সাথে জড়িত একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের সন্ধান পায় পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (চট্টগ্রাম মেট্রো)। এদের মধ্যে দুই দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হলেন চকরিয়ার পারভেজ ও নোয়াখালীর তাহেরপুরের সাবের আহমদ।

এছাড়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে আটক চার রোহিঙ্গা শরণার্থী হলেন, উখিয়া থাইংখালী হাকিমপাড়ার ক্যাম্পের আলি আহমদের ছেলে মো. ইউসুফ (২৩) মো. মুসা (২০), জমির হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ আজিজ ওরফে আইয়াজ ও কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের নুুরুল আলম। তবে নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে নেয়া তিন শরণার্থীর ঠিকানা দেখানো হয়েছে নোয়াখালীর সেনবাগে। তিন রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঠিকানা তদন্তকারী জেলা বিশেষ শাখার দুই এ এস আইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ছাবের আহমদ পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি নোয়াখালীর সেনবাগে থাকেন। হাটহাজারী মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে ২০১৯ সালে বন্ধু আসাব উদ্দিনের মাধ্যমে চকরিয়ার পারভেজের সাথে পরিচয় হয়। পারভেজ মূলত টাকার বিনিময়ে নোয়াখালী পাসপোর্ট অফিস থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাসপোর্ট তৈরির কাজ করতেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, রোহিঙ্গা পাসপোর্ট তৈরিতে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনায় জড়িত অন্যদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাসপোর্ট তৈরিতে ১৯ দালাল জড়িত। তারা হলেন, নোয়াখালী গাবুয়া বাজারের মাইন উদ্দিন, রুবেল, রকি, মাইন, রহমান, সোহাগ, ফজেল রাব্বি, মাইজদীর শহীদুল ইসলাম, মাসুদ, ইসমাইল, ফারুক, সিরাজ, একলাসপুরের রফিক, চৌমুহনীর হাছান ও ভুবন বাবু। এছাড়া নোয়াখালী পাসপোর্ট অফিসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও রোহিঙ্গা পাসপোর্ট তৈরিতে জড়িত রয়েছে এমনটি অভিযোগ উঠেছে।